পি কে ব্যানার্জী

খেলার মাঠে সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। উনি যখন খেলতেন তখন আমি জন্মাইনি আর উনি যখন কোচিং করতেন তখন বাবার হাত ধরে আমার ময়দানে যাওয়ার বয়স। তাঁর খেলার ঝলক প্রথম পড়ি চুনী গোস্বামীর লেখা “খেলতে খেলতে” বলে একটা ধারাবাহিকে, যেটা আনন্দমেলায় বেরোতো প্রতি মাসে। অধীর অপেক্ষায় বসে থাকতাম আর ওখান থেকেই একে একে জানলাম মারডেকা, মেলবোর্ন, জাকার্তা, ব্যাংককের কাহিনী। কোচিং জীবনে পিকে বনাম অমল দত্ত একটা মিথ – এতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা অথচ সৌজন্য হারাননি কোনোদিন।

তাকে সামনে থেকে দেখি অনেক পরে। স্মৃতি যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করে তাহলে সেটা কর্পোরেট এর কোনো একটা বার্ষিক অনুষ্ঠানে। অন্য প্লাটফর্ম কিন্তু বিষয় ছিল ভোকাল টনিক কি আজও প্রয়োজন? আর এই বিষয়ে পিকের থেকে যোগ্য লোক আর কোথায়? আগে তার ছাত্রদের মুখে শুনেছিলাম, সেদিন নিজের কানে শুনলাম দেশের কথা বলে, মায়ের কথা বলে, সদ্যজাত সন্তানের কথা বলে কি করে তাতিয়ে তুলতেন ওই প্লেয়ারদের। বাঙালিদের জন্য এক ধরণের, বিদেশিদের জন্য অন্য রকম। গরিব বাংলা দেশে না খেতে পাওয়া ফুটবলারদের বলতেন, গোল দিলে আমার বাড়িতে কচি পাঁঠার ঝোল খাওয়াবো কাল।

পুরস্কার যত না পেয়েছেন, সম্মান পেয়েছেন তার থেকে ঢের ঢের বেশি। দুঃখ করেছেন এশিয়ান গেমসে সোনা জয়ী ভারত আজ কোথায় নেমে গেছে। আক্ষেপ ছিল সেই পরিকাঠামো দিতে পারা যায়নি বলে যেটা চীন, জাপান, ইরাক, ইরান, কোরিয়া করতে পেরেছিলো। তাই এশিয়াতে ওরাই দাপিয়ে বেড়ায়।

বাংলার সবচেয়ে সফল ফুটবলার আর কোচের দিন আজ শেষ হলো। চুনী গোস্বামী ছাড়া আর কেউ নেই যার এমন বহুমুখী প্রতিভা ছিল, তাও চুনী কোনোদিন কোচিং এ আসেননি। সমাপতন, আজ পিকের খুব প্রিয় ফুটবলার অকালে ঝরে যাওয়া কৃশানু দে’রও মৃত্যুদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.