ছোটো বেলাটা কেটেছে বড় রাস্তার ধারে, দিনে বাস আর রাতে লরির ছন্দে। প্রথম কেনা হয়েছিল একতলা একটা রথ, বেশ শক্ত পোক্ত কাঠের – মেটে লাল রঙের। রথের আগের দিন মার্বেল কাগজ দিয়ে তাকে সাজানো, জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রাকে ওই ছোট্ট জায়গায় আগে পরে করে বসানো, দড়িটাকে আমার টানার মাপ মত করা – এগুলো করার জন্য সন্ধেবেলা পড়াশোনা থেকে ছুটি।
আর একটু বড় হলে, বায়না করার পরিস্থিতি যখন একটু একটু করে তৈরি হচ্ছে, তখন এলো তিন তলা রথ; তিন ঠাকুর আলাদা ঘর পেলো। অনেক দিন ওব্দি টেনেছি ওই দুটো রথ, পরে দিয়ে দিয়েছিলাম আরো ছোটদের। রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে যেতাম, পাশেই চলেছে বাস কিংবা টেম্পো। ভয় হয় নি কোনোদিন। রথ মাঝে মাঝে গর্তে হোচট খেয়ে উল্টে যেতো, আবার সোজা করে টানা শুরু। জগন্নাথ বোধহয় সেই ঠাকুর যে etobar রাস্তায় পড়ে গিয়েও অভিযোগ করেনি।
বিকেলে নিয়ম করে রথের মেলা যাওয়া হতো, সাথে পাপড় ভাঁজা আর গরম জিলিপি। অনেক কিছু কিনতাম – খেলনা, ঘর সাজাবার জিনিস, গেরোস্থালীর টুকিটাকি। অনেকে রথের মেলার নাগরদোলার কথা বলে, আমি চড়িনি ছোটবেলায়। বেহালা কিনেছিলাম অনেকবার, প্রত্যেকবারই ভেবেছিলাম বাজাতে পারবো। শেষ পর্যন্ত তবলা বাজাতে শিখেছিলাম, বেহালা নয়।
এখনকার বাচ্চাদের রথ টানা দেখে ফিরে যাচ্ছিলাম শৈশবে, ভাবছিলাম আবার যদি রথ টানতে পারতাম! এখনও রথের মেলায় যাই প্রতিবার, কিছু ইচ্ছে হলে কিনি। আজও হয়তো যাবো। গোটা মেলাটা দু’বার পাক খাওয়ার স্বভাব আজও আছে। ওই একদিন ছোটো হয়ে যাই আর পোড়া তেলে ভাজা পাপড় খাওয়ার আব্দার করি আজও। একদিন নাহয় কাচ্চি ঘানি সর্ষের তেল নাইবা খেলাম।