উস্তাদ বিসমিল্লাহ খান

তখন আমি স্কুলে পড়ি, একটা বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রণ পেলাম শোভাবাজার রাজবাড়িতে। মূলতঃ মা (গানের দিদিমণি), সাথে আমি আর বাবা। ভিতরে ঢুকতেই কানে এলো শ্রদ্ধেয় রামকুমার চট্টোপাধ্যায় গান গাইছেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এর পরিমন্ডলে বড় হওয়ার জন্য সব গানই তখন শোনা। শুনছিলাম মন দিয়ে। বাঘের গলায় কাঁটা, আমি বেল ফুল ফিরি করি পাড়ায় পাড়ায়, কমলিনী কেন অভিমান আর সবশেষে সেই বিখ্যাত কাদের কূলের বউ গো তুমি। পরবর্তী সময়ে আমার দাদু (বিখ্যাত বেহালা বাদক শ্রী অনিল কুমার রায় ) এবং আমার তবলা গুরুর (শ্রী বলরাম মুখোপাধ্যায় ) সুবাদে ওনারা তিনজনেই আমার দাদু ছিলেন। এই লেখা ওনাদের নিয়ে নয়। সেটা অন্য সময় বলব।

সাদা ফরাসের ওপর এসে বসলেন ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ সাহেব, সেই আমার প্রথম দেখা ওনাকে। আজও মনে আছে রাগ দেশ বাজিয়েছিলেন যেটা এখনও আমার প্রিয়তম রাগ। তারপর কিছু টুকরা আর বন্দিশ। আমি কিছু খাই নি সেদিন, মা বাবাও জোর করেনি আমার তন্ময়তা দেখে। পরে আস্তে আস্তে শুনলাম খাঁ সাহেবের সব বাজনা। প্রথমে রেকর্ড, তারপর ক্যাসেট। মালকোষ, ভৈরবী, জৌনপূরী। রংমহল উঠে যাওয়ার আগে শেষ অনুষ্ঠানে ওনার আসার কথা ছিল, আমি বাজনা শেষ করে খুব আশা করেছিলাম প্রণাম করব বলে। হয় নি। আমজাদ আলী, বিলাযেৎ খাঁর সাথে যুগলবন্দিও শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু ছোটবেলার মত প্রণাম করে আশীর্বাদ পাওয়া আর হয়নি, এই অপূর্ণতা আজো কষ্ট দেয়। জন্মদিনে প্রণাম জানাই অনেক দূর থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.