জীবনধারা – ১

খুব কাছের একজনের কথা বলি। একান্নবর্তী পরিবারে জন্ম, মফস্বলে। একসাথে একুশ জনের পাত পড়তো দিনে আর রাতে। মাঝে মাঝেই লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকতো। কোনোদিন শুনিনি কেউ অভুক্ত ছিল। ঠাকুমার নির্দেশ ছিল, দু মুঠো চাল বেশি নেওয়ার – কুকুর বিড়াল গরু ছাগল ও তো আছে। বাড়ির সবচেয়ে ছোট্ট সদস্যের খুব মজা। বিশাল নিকানো উঠোন, ঘরের মধ্যে দিয়ে ঘর, চওড়া সিঁড়ি আর উঁচু পাঁচিল দেওয়া মস্ত বড় এক ছাদ। আম, জামের বাগান। সারাদিন তার এই করতেই কেটে যায়। শুধু দূর দেশ থেকে বাবা এলে এই নিয়মে ছেদ পড়ে। তখন মা মরা ছেলেটার সব কিছু বাবা।

বাবাও তেমনি হাতে করে আনতো কত রকমের বই – কিছু ছবির, কিছু লেখার, কিছু আবার পড়াশোনার। ছেলেটা কোনোদিন খেলনা নিয়ে খেলে নি, বই ই তার কাছে খেলনা। একবার বাবা হাতে করে নিয়ে এলো একটা ইংরেজি বই – জুলে ভার্ন এর। রোজ রাতে বাবা গল্প শোনাতে শোনাতে ঘুম পাড়াতো ছোট্ট ছেলেটার। আর মাঝে মাঝেই বীরপুরুষ, লুকোচুরি থেকে উদাত্ত গলায় আবৃত্তি। কি করে যে কেটে যেতো দশ – বারো দিন, বুঝতেই পারতো না।

একদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে উঠে সে বাবাকে দেখতে পেতো না। গোটা বাড়ি খুঁজে বাবা বাবা ডেকে ক্লান্ত সে বসে পড়তো সদর দরজার সামনে। বাবা বাইরে গেছে, ফিরে আসবে একটু পরেই। বাবা আসে, আবার হয়তো এক মাস পরে। ছেলের চোখের জল চোখেই শুকিয়ে গেছে ততদিনে। এবার সে ঠিক করেছে, রাতে আর ঘুমাবে না। বাবা যতোই গল্প বলুক, আদর করে দিক – সে কিছুতেই ঘুমাতে যাবে না। ঘুমালে কাল সকালে বাবা আবার ঠিক চলে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.