দাদু ছিলেন ডাক্তার, যে সে ডাক্তার নন; সাথে ছিল তার দোর্দণ্ডপ্রতাপ। তিন – চারটে গ্রামের মানুষ একডাকে চিনতো ওনাকে। পড়াশোনায় কোনোদিন সেকেন্ড হন নি, সাথে খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন। গ্রামের ইস্কুলে ম্যাট্রিক পাশ করে শহর থেকে বাকি সব পড়াশোনা। ডাক্তারি পাশ করে বিলেত গেছিলেন আরও পড়তে। ফিরে এসে শহরে কিছুদিন প্রাকটিস। বাবার শরীর খারাপ হওয়ায় গ্রামে ফিরেছিলেন, সেই থেকে গ্রামেই থেকে গেলেন। গ্রামের লোকজনের কাছে তিনি সাক্ষাৎ ভগবান। মারা যাওয়ার আগে বাবা দাদুর থেকে কথা আদায় করে নিয়েছিলেন – ঠাকুমার পড়া শেষ হলে তাকেই যেন বিয়ে করেন।
ঠাকুমার মুখে শোনা, বিয়ের আয়োজন নাকি ছিল এলাহী। আশেপাশের তিন গ্রামের সবার নেমন্তন্ন ছিল পাঁচ দিন। খেয়েদেয়ে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করে তবে তারা বাড়ি ফিরেছেন। এহেন দাদু বিয়ের পর ঠিক করলেন, ঠাকুমাকেও আরও পড়াশোনা করতে হবে; ইংরেজি শিখতে হবে। সেইমতো গ্রামের শেষ প্রান্তে এক সাহেবের কাছে যাওয়া হল। গ্রামের মাঠ ঘাট নদী নালাকে ভালবেসে সাহেব এখানেই থেকে গেছিলেন আর গ্রামের ছেলেদের ইংরাজি শেখাতেন। রোজ সকালে ঠাকুমাকে দাদু দিয়ে আসতেন সাহেবের কাছে আর বেলায় সাহেব যখন ঘোড়ায় করে গ্রাম ঘুরতে বেরতেন তখন ঠাকুমাকে দিয়ে যেতেন। ঠাকুমার একটু একটু ঘোড়ায় চড়া শেখা ওখানেই।
বাড়ীতে পড়া এক জিনিস আর সেটার পরীক্ষা – সে তো আরও কঠিন। দাদু আর সাহেবের ইচ্ছে ঠাকুমা যেন বৃত্তি পরীক্ষায় বসে। অনেক সাধ্য সাধনা করে ঠাকুমা পরীক্ষায় বসে আর ওই অঞ্চলে প্রথম মেয়ে হিসেবে জলপানি পায়। দাদুর আনন্দ আর দেখে কে। গ্রামে মেয়েদের জন্যে একটা পাঠশালাই খুলে দিলেন, দিয়ে দিলেন বাড়ীর একটা অংশ। সেখানে পালা করে দাদু, ঠাকুমা আর সাহেব মিলে গ্রামের সব মেয়েদের আলাদা করে বাংলা ইংরাজি অঙ্ক ইতিহাস পড়াতেন।
চমক ভাঙল ঠাকুমার ডাকে – হ্যাঁরে, বৃষ্টি এয়েছে। ছাদ থেকে আচারের বয়ামগুলো তুলে আন দিকি বাপু।
দারুণ দারুণ।