আচ্ছা, রাজীবকে আপনারা কি বলে ডাকেন? রাজীবই বলেন তো? নাকি রজত বা রাজেন বলে ডাকেন? ডাকেন না তো? আমিও ঠিক সেইরকম আনোয়ার বলেই ডাকি, সেটা আলী হয়ে যায় না । ভাবছেন কেনো বলছি এইরকম কথা? বেশ তবে শুনুন।
প্রাইমারীতে ক্লাস ওয়ান থেকে ফোর অব্দি যে স্কুলে পড়েছি সেখানে শুভজিৎ বলে এক বন্ধু ছিল। কাছেই থাকতো, তাই স্কুল ছুটি হলে আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধু একসাথে বাড়ি ফিরতাম, মায়েরা পেছনে গল্প করতে করতে আসতো। সেই শুভজিৎ যে কোনোদিন সৈকত ছাড়া কিছু বলে ডাকেনি, তার মা, মানে কাকিমা, আমায় সবসময় সৌকত বলে ডাকতেন। কারণ আজও জানি না। কলকাতার বাইরের অফিসকর্মীদের অধিকাংশ আমায় সাকেত বলে ডাকে, বিশেষ করে দিল্লী নয়ডার পরিচিতরা। কোনোদিন তাদের মুখে আমার আসল নামটা শুনিনি। যতো বছর দেখা হয়েছে, বলা সত্ত্বেও আমার আর সৈকত হওয়া হয়ে ওঠেনি।
সুযোগ থাকলে নামটা পালটে দিতাম। আমি বিশ্বাস করি, নাম এমন হওয়া উচিত যেটা সবার কাছে উচ্চারণযোগ্য হবে। তার জন্যে কঠিন নাম রাখার দরকার নেই। দুই বোন ছিল বিদ্যুৎলেখা আর চন্দনলেখা, ছোটবেলায় পরীক্ষার খাতায় পুরো নাম আর সাথে বসু মল্লিক লিখতে নিশ্চয়ই অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। ঠিক তেমনি আকাঙ্খা বা সূর্যস্নাতা। বরং, কিছু বাঙালি নামেও অবাঙালি ফ্লেভার ঢোকানোর ব্যবস্থা আছে। বিপিন তাই হয়ে যায় ভিপিন, বিশালকে সবাই ভিশাল বলে ডাকে। এমনকি সাগর, তন্ময়ও খুব সোজা আর কমন নাম যেগুলোর বিকৃতি হয় না। অন্তত সৈকতকে তো আর শওকত হতে হবে না।
কলেজ ইউনিভার্সিটিতে গুপ্তা বলে অনেকে ডাকতো, এটা শুরু করে প্রিয় বন্ধু বালাজি। Gupt সিনেমার আদলে ওই নামেই ডাকতো। সৈকত ডাকে গুপ্তা বলে, ভালই লাগে। কর্পোরেট দুনিয়ায় আমার পরিচিতি ছিল SG বলে। বহু বছর আমার কলিগরা আমায় SG নামেই ডেকে এসেছে আর এখনো কিছু বন্ধু আছে যারা ওই নামেই ডাকে।
কাজের জায়গাতেও কুড়ি বছর পার করে এসেছি কিছুদিন আগেই। অনেক বছর স্যার শুনে শুনে ক্লান্ত। লিফ্ট এ করে ওপরে উঠছি, হঠাৎ কেউ হয়তো স্যার বলে অন্য কাউকে ডাকলো – আমার ইন্দ্রিয় অবচেতন ভাবেই জেগে ওঠে; ভেবে উঠি আমাকেই কিছু বলছে হয়তো। সাড়া দেওয়ার পর বুঝতে পারি আমায় উদ্দেশ্য করে বলা নয়। অনেক জায়গায় পড়ানোর সুবাদে আজও কেউ যদি ‘স্যার কেমন আছেন’ জিজ্ঞেস করে, ভালই লাগে। কিন্তু, নাম ধরে ডেকে তুই তোকারি করার বন্ধু অনেক কমে যাচ্ছে। তুমি, আপনি, স্যার, এগুলো বড্ড ক্লিশে মনে হয় – কোথায় যেন সেই আন্তরিকতা খুঁজে পাই না। আজও তাই খুঁজে বেড়াই তাদের যাদের কাছে আমি শুধুই সৈকত, যারা শুধুমাত্র তুই ছাড়া কথা বলে না। দিনের শেষে এইরকম একটা ফোন সব ক্লান্তি দূর করে দেয়।