বটের ঝুরি

যখন এই জমিটা কিনেছিলাম, অনেকেই বলেছিল – এখানে কিনছো বটকৃষ্ণ, কিছু নেই আশেপাশে সেটা দেখতে পাচ্ছ? আরে, খাবে কি? নোনা জলে তো আর পেট ভরবে না। তার চেয়ে বরং বাপু তুমি মন্দিরের পাশের অত বড় বাড়িটা নাও। নগদ পয়সায় নিলে ওরা ছেড়ে দেবে বলেছে। তারপর ধর্মশালা বানিয়ে দাও। তুমি ব্যবসায়ী মানুষ, আর আমায় কিনা শেখাতে হচ্ছে কোথায় টাকা উড়ছে? হায় হায়!

বন্ধু মানুষ রাজনারায়ণ খুব একটা ভুল বলেনি। আমি বেনের ছেলে, ব্যবসা আমার রক্তে। সেই আমি যখন সমুদ্রের পাড়ে একটা জমি নিলাম বাগানবাড়ি করব বলে, অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে এতে আশ্চর্যের তো কিছু নেই। এখন যতোগুলো বাড়ি আর হোটেল আছে, তখন তো তার কিছুই ছিল না। সামনে অপার সমুদ্র, দুপাশে শুধু বালি আর জঙ্গল। রাতের দিকে মাঝে মাঝে শেয়ালও তো ডাকতো, আমি নিজে শুনেছি।

বাড়িটা বানাতে পাক্কা তিন বছর লেগেছিল। দালান, খিলান, উঠোন সব হলো একে একে। নিচের তলা রাখা হল কাজের লোকদের জন্যে। আর ওপরে আমরা। উদ্দেশ্য একটাই, বারান্দা বা ঘর থেকে সরাসরি সমুদ্র দেখব বলে।

খুব একটা যে এই বাড়িতে আমরা থাকতাম, তা নয়। কলকাতা ছেড়ে আসতে মন চাইতো না। তার ওপর ডাক্তারের কড়া নির্দেশ ছিল, বছরে দুবার পশ্চিমে বাবাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই জন্যে দুটো বাড়ি করা হয়েছিল গিরিডি আর শিমুলতলায়। তাও এসেছি এখানে, থেকেছি বেশ কয়েকবার। বাকি সময়টা রামু কাকা, লছমী ভাবী আর তার ছেলেরা দেখাশোনা করতো। মাঝে মাঝেই শুনতে পেতাম, ওটা নাকি ভূতের বাড়ি। রাতের বেলা সমুদ্রের ঢেউ ছাপিয়ে শোনা যায় কারুর হাসির আওয়াজ। কেউ কেউ বলেছিল, ওরা নাকি টাকা নিয়ে অনেককে থাকতে দেয়। একে সমুদ্রের ঠিক সামনে এত ভালো জায়গায় বাড়ি তার ওপর সবকিছু যত্ন করে সাজিয়ে রাখা। ভালো না লাগে কার সাধ্যি! তবে আমরা যতদিন এসেছি, কোনো অসুবিধে হয়নি। শুধু শেষবার ছাড়া, তারপর থেকে আর কোনোদিন এই বাড়িতে আমরা কেউ যাইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.