দিল্লী যাচ্ছি রাজধানীতে। শীতের বিকেলের ট্রেন হাওড়া থেকে। আমি পেয়েছি ওপরের বার্থ, টু টায়ার কোচের ওপরের জায়গাটা আমার বেশ পছন্দের। শান্তিতে হয় বই পড়া বা গান শোনা যায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই। আগে তো Walkman ছিল, মাঝে ipod এলো আর এখন তো মোবাইলের হেডফোন ভরসা। তবে সেবার যাচ্ছিলাম Ministry of Cultural Affairs এ Fellowship এর ইন্টারভিউ দিতে, তাই সেই সম্পর্কেই কিছু নাড়াচাড়া করছিলাম।
আমার নিচে আসামের এক জন, দিল্লী যাচ্ছেন বোনের কাছে। আমার মুখোমুখি একটি মেয়ে, জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি তার পরিচয়! শুধু দেখেছি, একটা Agatha Christie নিয়ে সে কলকাতা থেকে দিল্লী চলে এলো। এরা কেউই আমার আজকের প্রধান চরিত্র নয়।
সন্ধ্যেবেলা ধানবাদ থেকে উঠলেন মধ্য বয়স্ক একজন, সাথে একটা কালো বড় ব্যাগ। অবাঙ্গালী স্বরে বাংলা বলেন, যারা দুর্গাপুর আসানসোল বার্নপুর অঞ্চলের মানুষদের জানেন তারা আরো ভালো বুঝতে পারবেন। সেই হামি কলকাতা যাচ্ছি টাইপ এর পাবলিক। সামনের নিচের সীটটা তারই।
যাই হোক, আমরা সবাই যেখানে রেল কোম্পানির দেওয়া সব খাবার খেয়েই চলেছি সারা সন্ধ্যে আর রাত জুড়ে, তিনি কিন্তু খেলেন বাড়ি থেকে টিফিন বক্সে করে আনা পরোটা, আর আচার। পরের দিন সকাল সকাল ঘুম ভাঙে নি, জানতেও পারিনি খুব ভোরে তিনি কানপুর নেমে গেছেন।
ঘুম ভেঙ্গে গেল হৈচৈ শুনে। চোখ খুলে দেখি, কোচ এর attendant আমার নিচের অসমিয়া ভদ্রলোকের সাথে হাত পা নেড়ে কথা বলছে। আধা বাংলা আধা হিন্দিতে হওয়া সেই আলোচনার বিষয়বস্তু হল, আগের রাতে ধানবাদ থেকে ওঠা সেই মানুষটি রেলের দেওয়া সাদা নরম টাওয়েল, দুটো ধবধবে সাদা চাদর, কম্বল এমনকি বালিশের কভারটাও যত্ন করে নিজের ঢাউস কালো ব্যাগে ভরে নিয়ে ভোররাতে কানপুরে নেমে গেছেন।
এরকম অনেক ঘটনা চারপাশে ঘটে, সব মনে রাখা সম্ভব নয়। এই ঘটনাটা আর ওই মানুষটিকেও হয়তো মনে পড়তো না যদি না গতকাল ভারতীয় রেলের একটা রিপোর্ট পড়তাম। এই বছর, মানে 2023 সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল, চার মাসে মোট 56 লাখ টাকার এইসব কম্বল, চাদর, বালিশের কভার, টাওয়েল চুরি গেছে!