ছোটবেলায় এলভিস প্রেসলি, বব ডিলান, জন ডেনভারদের নাম শুনলেও এঁদের গান শুনতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছিলো। তখন আমি মজে ছিলাম একদিকে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত আর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানে আর অন্য দিকে বড়ে গুলাম আলী, আমির খান, বাবা আলাউদ্দিন, রবিশঙ্কর আর নিখিল ব্যানার্জীতে। তাই পশ্চিমের গান একটা সময় অব্দি আমার কাছে অধরাই ছিল।
স্কুল পেরিয়ে কলেজে উঠেছি, কালবৈশাখীর মতো ঝড় উঠলো নচিকেতা আর সুমনের গানে। দুজন দুরকম – নচিকেতা (পরবর্তীকালে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নচিদা) যেখানে আকাশ, বাতাস ফুল আর ফল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে বলছে, “এই তুমি কি আমায় ভালোবাসো” সেখানে সুমন (না, দাদা বলার ধৃষ্টতা দেখাতে পারিনি, বরাবরই একটু দূরত্ব রেখে চলতেন) নতুন করে শেখালো ভালোবাসার দশ ফুট বাই দশ ফুট।
তখনই শুনলাম সেই সব গান যা বাধ্য করলো তার শিকড় খুঁজে বের করতে! ততদিন অব্দি আমাদের দৌড় ছিল ‘আমরা করবো জয়’ (we shall overcome) এর মতো কিছু বিদেশী অনুপ্রেরণায় গাওয়া গণসংগীত, ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’র মতো রবীন্দ্রনাথের বিলিতি গানের ছায়া আর কিছু হিন্দি গান যা পাশ্চাত্যের থেকে টোকা বলে সমালোচনা করা হতো। পিট্ সিগার এর মতো অনেকের সাথে সুমন টেনে নিয়ে চলে এলেন বব ডিলানকেও! সেই ডিলান যিনি নিজেকে আমেরিকার বাউল বলতে ভালোবাসতেন, আর পছন্দ করতেন খিচুড়ি খেতে। কলকাতায় এসেছিলেন একবারই, 1990 তে, পূর্ণ চন্দ্র দাস বাউলের ছেলের বিয়েতে ঢাকুরিয়াতে।
কোন গান ছেড়ে কোন গানের কথা বলবো? “Blowin’ in the Wind”, “The Times They Are a-Changin'”, “Masters of War”, “A Hard Rain’s A-Gonna Fall” শুধু এই গানগুলোই তো জাতীয় সংগীত হয়ে গেছিলো একটা সময়ে, মুখে মুখে ফিরত সবার। বাকি হাজার হাজার গানের কথা তো ছেড়েই দিলাম। এই গানগুলোর মধ্যে দিয়ে ভদ্রলোক এমন কিছু মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলেছেন যা আর কেউ পারবেন বলে আমার তো অন্তত মনে হয় না। এছাড়া আর যা যা পেয়েছেন, যেমন দশটা গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড, একটা গোল্ডেন গ্লোব অস্কার, একটা পুলিৎজার আর সবশেষে নোবেল – এগুলোকে হিসেবে ধরলে বব ডিলানকে আপনি অন্য গ্রহের মানুষ বলতে বাধ্য।
আজ ভদ্রলোকের জন্মদিন, ঘটনাচক্রে আমার বাবার সমবয়সী উনি – একই সালে জন্ম! যথেষ্ট ক্ষমতা লাগে দুটো বা তিনটে জেনারেশনকে নিজের গান শুনিয়ে মুগ্ধ করে রাখতে।
বব ডিলানরাই সম্ভবত সেটা পারেন!