জীবনধারা – ৬

আমার আবদারে স্নানের মেলা দিয়েই শুরু করতে হলো ঠাকুমাকে। জানি না কেউ কুম্ভস্নানের মতো করে কেউ এটা শুরু করে ছিল কিনা, কিন্তু হাজার হাজার পুরুষ নারী যেত এই স্নানের মেলায়। ঠাকুমাও নাকি অনেক বার গেছে। উল্লাপাড়ার কাছে করতোয়া নদীতে বসতো এই স্নানের মেলা। মা ঠাকুমাদের বিশ্বাস ছিল, এই এক দিন স্নান করলে সব অসুখ সেরে…

জীবনধারা – ৫

ঠাকুমা ঘুম পাড়াতে পাড়াতে বলে চলে – এই সিরাজগঞ্জ ছিল শিল্প, সাহিত্য আর ঐতিহ্যের শহর। সেখানে ঈদও যেমন ধুমধাম করে পালন করা হতো, দূর্গাপুজোও সমান ভাবে জনপ্রিয় ছিল। সত্যিকারের কোনো ভাগ ছিল না হিন্দু আর মুসলমানের। কোনোদিন ভাবিনি যে সালমা আমার বাড়ির উঠোন ঝাঁট দেয় বলে তুলসীমঞ্চ অপবিত্র হয়ে গেলো। তোকে নিয়ে তো নৌকো করে…

জীবনধারা – ৪

ঠাকুমার কাছে রাতে ঘুমানোর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ধাঁধা শোনা আর তার উত্তর খোঁজা। ফোকলা দাঁতে অদ্ভুত সুরে এখনকার ভাষায় One Liner – ‘ঝাড়ের মধ্যে থাইক্যা বাড়ালো টিয়া, লাল টুপিটা মাথায় দিয়া’ অথবা, ‘আল্লার কি সৃষ্টি, লাঠি ভরা মিষ্টি’ ওপার বাংলায় এরকম অনেক ‘মানে ধরা’ ছিল যেগুলোকে আমরা ধাঁধা বলি এখানে। ভাবতে ভাবতে কখন ঘুম এসে…

জীবনধারা – ৩

দাদু ছিলেন ডাক্তার, যে সে ডাক্তার নন; সাথে ছিল তার দোর্দণ্ডপ্রতাপ। তিন – চারটে গ্রামের মানুষ একডাকে চিনতো ওনাকে। পড়াশোনায় কোনোদিন সেকেন্ড হন নি, সাথে খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন। গ্রামের ইস্কুলে ম্যাট্রিক পাশ করে শহর থেকে বাকি সব পড়াশোনা। ডাক্তারি পাশ করে বিলেত গেছিলেন আরও পড়তে। ফিরে এসে শহরে কিছুদিন প্রাকটিস। বাবার শরীর খারাপ হওয়ায় গ্রামে ফিরেছিলেন,…

জীবনধারা – ২

ঠাকুমা ছাদে বড়ি দিয়েছে, খেসারীর আর মটর ডালের। সাদা বড়ি আর হলুদ বড়ি। বছরভর ঠাকুমার এটা একটা বড় কাজ। এমনিতে বুড়ি সারাদিনই কিছু না কিছু করে যাচ্ছে। ভোর চারটে উঠে কুয়োর জলে স্নান, শীত গ্রীষ্ম বিরাম নেই। গতবছর নিউমোনিয়াতে ভুগে বেশ কিছুদিন শয্যাশায়ী ছিলেন, একটু সুস্থ হতেই আবার আগের মত। জিজ্ঞেস করলে বলে, তাঁকে নাকি…

জীবনধারা – ১

খুব কাছের একজনের কথা বলি। একান্নবর্তী পরিবারে জন্ম, মফস্বলে। একসাথে একুশ জনের পাত পড়তো দিনে আর রাতে। মাঝে মাঝেই লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকতো। কোনোদিন শুনিনি কেউ অভুক্ত ছিল। ঠাকুমার নির্দেশ ছিল, দু মুঠো চাল বেশি নেওয়ার – কুকুর বিড়াল গরু ছাগল ও তো আছে। বাড়ির সবচেয়ে ছোট্ট সদস্যের খুব মজা। বিশাল নিকানো উঠোন, ঘরের মধ্যে…