গোটাপাঠানা

কর্মসূত্রে এখানে অল্প কিছুদিন থাকতে হবে, তাই বন্ধুবরের অনুরোধে তার সাজানো ফ্ল্যাটেই থাকবো মনস্থির করলাম। গৃহপ্রবেশের পুজো করে তিন দিন থেকে আর থাকেনি ওরা। দুটো ঘরে বিছানা, আলমারি আছে, রান্নাঘরে চিমনিও কাজ করে। অতএব মাস খানেকের জন্যে এটাই আমাদের ঠিকানা।

ভাবছেন, ছিল মাত্র মাস খানেক, সেটার আবার এত ঘটা করে বলার দরকার কি? তাহলে শুনুন, শহরের একদম শেষ প্রান্তে এই বাড়ি, মোটামুটি কুড়ি – বাইশ কিলোমিটার দূরে। তার চেয়েও আকর্ষণীয় হল, একটা জঙ্গলের পাশে এই ফ্ল্যাট। সামনের রাস্তা বাইপাস হয়ে হাইওয়েতে মিশেছে আর পেছনে ঘন জঙ্গল সাথে ছোটো ছোটো টিলা। জায়গাটার নাম গোঠাপাটানা। এই অঞ্চল বিখ্যাত পাঁঠার মাংসের জন্যে, স্বাদ সত্যি অতুলনীয়। শুধু ওখানেই গোটা দশেক দোকান আছে – সবাই সেরা।

যাই হোক, মেন লাইনে ফিরে আসা যাক। মজার কথা হল, এই ফ্ল্যাটের সবচেয়ে কাছের মুদির দোকানটা দু’ কিমি দূরে। তাও সব কিছু পাওয়া যায় না, বলে রাখলে শহর থেকে নিয়ে আসবে। চড়াই পেরিয়ে ওঠা ওই চত্বরে আছে একটা ভাতের হোটেল – যেটার ভরসায় আমরা এক মাস ছিলাম, একটা মোবাইলের দোকান যে কিনা সকালে সবজিও বিক্রি করে, আর বিকেলে গাছের তলায় বসা একটা অস্থায়ী চিকেন পকোরার স্টল। সবচেয়ে কাছের বাজার পাঁচ কিলোমিটার দূরে, বাকি জিনিসপত্র আরও একটু দূরে। পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে গ্রামের ভিতরে, যদিও বাড়ি কিছু দেখা যায় না এখান থেকে – এতটাই দূরে। দিনের মধ্যে প্রায়ই আর রাতে রোজ লোডশেডিং হতো। ভয় লাগার সব উপকরণ থাকা সত্ত্বেও ভালই ছিলাম। শুধু একটাই চিন্তা ছিল, কত তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যেতে পারবো। তবে পেছন ফিরে তাকালে মনে পড়ে ওই হোটেলের মাশরুম আর মাটন – খুউব সুস্বাদু।

আমার কথা বলা হয়ে গেলো, এবার চলে যাচ্ছি।

ও হ্যাঁ, হাতি বাবু এই পথে একবারই শুধু এসেছিলেন, দেখাও দিয়েছিলেন। কোনো এক রবিবারের দুপুরে, যখন নিচে নেমে চিকেন থালি নিচ্ছিলাম। তবে, দামাল নয়, ভদ্র – তবেই না বেঁচে থেকে এই লেখাটা লিখছি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.