ছেলেটা বরাবরই একটু অন্যরকম। শহুরে সভ্যতায় বড় হয়েও ভালোবাসে কাদাজলে ছপ্ ছপ্ করে লাফাতে কিংবা পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে একটা জায়গায় তিনদিন শুধুই বসে কাটিয়ে দিতে। সেই ছেলেটা যে আর সবার সাথে ডাংগুলি খেলবে বা রকে বসে আড্ডা মারবে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে যখন বন্ধুরা মিলে ঘাটশিলা যাওয়ার প্ল্যান করলো, আর কেউ কিছু বললেও দীপক-সঙ্গীতা তাদের ছেলেকে কিছু বলেনি। ততদিনে ছেলে চিনে গেছে দেশী আর বিদেশীর গন্ধের তফাৎ, নাহয় নাই বা নিজে খেলো।
দুরন্ত ছেলে বলে বদনাম থাকলেও সবাই ভালোবাসে তাকে। সেটা যতো না পড়াশোনার জন্যে তার চেয়ে বেশি তার মিষ্টি স্বভাবের জন্যে। সরস্বতী পুজোর চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে রক্তদান তার কাছে জল ভাত। সাহসটাও বড্ড বেশি, নাহলে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে এগিয়ে চলে যায় গানের সাথে তবলা বাজাবে বলে! কতো বয়স তখন তার? ষোলো কি সতেরো! কলেজের ছেলে মেয়েরা excursion এ যাবে, কে দায়িত্ব নেবে? কেনো একজন আছে তো। ঠিক খুঁজে পেতে জোগাড় করে শুশুনিয়া পাহাড়ের রবীন মামাকে যাকে পাঁচ বছর আগে কোনো এক বিয়েবাড়িতে দেখেছিল।
সেই ছেলেটা একদিন, অনেক পরে, অনেক অনেক পরে, যখন আগের সেই উন্মাদনা আর নেই, বয়স অনেক কিছু স্তিমিত করে দিয়েছে, সেই রকম সময়ে কিছু একটা করে ফেলে তখন আশেপাশের অজানা কিছু মানুষের চিন্তা হয় বৈকি। মাঝ বয়সে এসে তার ইচ্ছে জাগলো বিখ্যাত সব মন্দির দর্শন করবে। আপাদমস্তক কম্যুনিস্ট যখন দেবদেবীতে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে তখন চিন্তা হয় বটে। আশ্বস্ত করে সে তার চারপাশের লোকেদের, বলে – একাই ঘুরে বেড়াবে, দেখবে আর জানবে। সাথী হয় ছেলেবেলার এক বাপ-মা মরা অনাথ বন্ধু, যে তার অনেক কিছুর সাক্ষী।
সাক্ষী সে বস্তিতে গিয়ে চাল ডাল বিতরণে, সাক্ষী সে নীরবে বাড়ির কাজের মাসির মেয়ের পড়ার টাকা জোগানে। তেমনি সাক্ষী কোনো এক নাম না জানা মন্দির এর বাইরে সবুজ রঙের শরবত আর রাবরি খেয়ে দুদিন ঘুমিয়ে থাকা ছেলেটার চোখ খোলার। দস্যি ছেলে পরে মুচকি হেসে বলে – দ্যাখ, কেমন দিলাম? এই জন্যেই তো বিয়ে করিনি, তোকেও করতে দিই নি।
ইন্দ্রনাথ আর শ্রীকান্তর ছায়া পাচ্ছেন? পেতেই পারেন; তবে এদের জীবন অন্য খাতে চলে, অন্য সুরে বাঁধা। খালি পায়ে ফুটবল খেলতে আর পুজোর আগে ফুল গাছের টব চুরি করতে এদের জুড়ি নেই। পড়াশোনা করে স্কলারশিপও পায় আবার স্কুলের ফুটবল টিম হবে না এদের ছাড়া। ছেলেবেলায় একসাথে শুরু করে মাঝে ছাড়াছড়ি হয়ে শেষে আবার দুজনের দুজনকে খুঁজে পাওয়া – এই নিয়েই ওদের গল্প।
একটু চেনা চেনা লাগছে যেন ছেলে টা কে। অপেক্ষা য় থাকলাম পরবর্তী পর্ব র জন্য 👍