কুঠির ঘাট

কে যেন মারা গেছে বলে স্কুল হাফ ছুটি হয়ে গেছে। এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে কি আর হবে, তাই তিনজন মিলে ক্লাস রুমে বসেই বেঞ্চ বাজাচ্ছে। একজন তবলা শিখছে ছোটো থেকে, একজন পাড়ার অনুষ্ঠানে টুকটাক কঙ্গো বঙ্গো বাজায় আর শেষ জন ভালো তীর ছোড়ে। কামালই আইডিয়াটা দিলো, যাবি নাকি গঙ্গার ধারের ওই বাড়িতে? কিছু করার নেই দেখে সবাই রাজি। বাড়ি না, ওটা আসলে একটা কুঠি। নদী বেয়ে কিছু সাহেব নাকি এসেছিল অনেক বছর আগে, নিরিবিলি জায়গাটা ভালো লেগেছিল বলে একটা পেল্লাই বাড়ি বানিয়ে ফেলেছিল।

সেই সাহেবগুলোও নেই, বাড়িতেও থাকার কেউ নেই। তবে, গত সপ্তাহে একটা ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যেবেলা সুমন কাউকে একটা ওই বাড়ির পেছনের জঙ্গল থেকে বেরোতে দেখেছে। চিনতে পারেনি, তবে মনে হলো সে রাস্তাঘাট সব চেনে। চোর তো ওই বাড়িতে যাবে না, কিছুই অবশিষ্ট নেই আর। একে একে জানলার কাঁচ, দরজার পাল্লা হেরোইন খোর রা খুলে নিয়ে গেছে। তাহলে কে ছিল, কেনোই বা ভেতরে ঢুকেছিল?

দুপুরেই এদিকে লোক কম থাকে, নিতান্ত দরকার না পড়লে এই পথ কেউ মারায় না। স্কুলের কাছেই, তাই তিনজন খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলো। একটা জং ধরা গেট, অর্ধেক ভাঙা। ভেতরে ঢুকতে কোনো কষ্ট এই ছেলেগুলোর হল না। দেরি হয়ে গেলে স্কুলের পাঁচিল টপকানো যাদের স্বভাব, তাদের কাছে এই গেট তো স্বর্গ। কিন্তু, কিছুই তো নেই ভেতরে! জঙ্গল আর আগাছায় ভর্তি, বড় বড় ঘাস আর ঘরগুলোর মধ্যে একরাশ ধুলো আর ঝুল। মন খারাপ করে বেরিয়ে এলো সবাই! কি দেখতে কি দেখেছে কে জানে! এখানে কেউ আসতেও পরে না, থাকতেও পারে না। মাথা নাড়তে নাড়তে ওরা বেরিয়ে এলো। দুপুরে একটা অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেয়েছিলো, সব নদীর জলে ধুয়ে গেল। এর থেকে জেলেপাড়ার মাঠে গিয়ে একটা ম্যাচ খেললে কাজে দিতো।

সুমন আর কামাল চলে যেতে লিটন কিছুক্ষণ নদীর ধারে বসলো। এবার বাড়ি ফিরে পাশের মাঠে খেলতে যাবে। কুঠিবাড়ি পেরোনোর সময় হঠাৎ কিছু আওয়াজ কানে এলো। হ্যাঁ, ঠিক তো, ভেতর থেকেই তো আসছে। তবে শুধু একজনের গলা শোনা যাচ্ছে, কোনো পাগল ঢুকলো কি? রহস্য আর গোয়েন্দা গল্প পড়ে লিটন ততদিনে জেনে গেছে এইরকম পরিস্থিতিতে পা টিপে টিপে কি করে এগোতে হয়। NCC করার জন্যে সাহস তো ছিলই, সাথে যোগ হয়েছে বই পড়া বুদ্ধি। একজন মাঝারি অথচ মাপা গলায় কিছু একটা বলছে। কিন্তু একজন কেনো? আস্তে করে গেট দিয়ে ঢুকে লিটন বোঝার চেষ্টা করলো আওয়াজটা কোন দিক থেকে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.