সব নগরেরই একটা ইতিহাস থাকে, আর সেই ইতিহাসের পাতায় রাখা থাকে এমন কিছু স্থান যা লোক মুখে কম শোনা যায়। গোন্দলপাড়া এমনই একটা জায়গা, চন্দননগর আর মানকুণ্ডুর মাঝে, একেবারে গঙ্গার ধারে।
ইতিহাসের রাস্তা ধরে হাটলে ফিরে যেতে হবে সেই সময়ে যখন ডেনমার্কের মানুষেরা ভারতে এসেছিল। ডাচরা আসার পরে পরেই ভারতে আসে ডেনমার্ক এর লোকজন। Danish India বলা হত তামিলনাড়ু, নিকোবর দ্বীপ, আর আমাদের শ্রীরামপুর সাথে এই গোন্দলপাড়া। প্রায় এক যুগ ব্যবসা করে এই Danish East India Company, পরে সব বিক্রি করে দেয় ব্রিটিশদের। ওই সময়ে গোন্দলপাড়াকে লোকে ডেনমার্ক নগর বলেও ডাকতো, ঠিক যেমন শ্রীরামপুর কে বলা হতো ফ্রেডরিক্স নগর।
ঘুরতে ঘুরতে সেদিন চলে গিয়েছিলাম এই গোন্দলপাড়ায়, বৃষ্টিভেজা এক বিকেলে। প্রথমেই চোখে পড়লো বিশাল লম্বা গোন্দলপাড়া জুট মিল। আকার আর আয়তনই বলে দেয়, একসময় কেমন জমজমাট ছিল এই মিল। জুটের ব্যাগের জন্য বেশ নাম ছিল এই মিলের। গায়ে লেগে আছে একটা নকুলদানার কারখানা – বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম চিনি থেকে নকুলদানা হওয়া। পাশেই ফেরিঘাট, ওপারে আটপুর। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি, শান্ত আর গঙ্গার জন্য খুব স্নিগ্ধ। নদী পারাপার হতে আসা মানুষজনের নামা ওঠা দেখতে দেখতে বেশ সময় কেটে যায়।
আর একটু এগোলে মণ্ডলবাড়ি , ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আতুঁরঘর। এখানেই লুকিয়ে রাখা ছিল আলিপুর বোমার মামলার বিশ্বাসঘাতক রাজসাক্ষী নরেন গোস্বামীকে মারার পিস্তল, যার জন্য বিপ্লবী কানাইলাল দত্তর ফাঁসি হয়।
ফেরিঘাট আর জুটমিল এর মাঝে আছে একটা প্রাচীন মন্দির, নীলকন্ঠেশ্বর মন্দির বলে পরিচিত। প্রায় একশো বছরের পুরোনো এই মন্দিরে মা কালী পূজিত হন আট বছরের এক বালিকা রূপে। ঠিক পাশেই বিশালাকার এক শিব লিঙ্গ। ইতিহাস বলে, 1913 সালে রথ যাত্রার দিনে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন শিবনাথ মুখার্জি আর শরৎ কুমারী দেবী। স্বপ্নে আদেশ পেয়ে নিঃসন্তান এই দম্পতি চার বছর ধরে নব্বই হাজার টাকা ব্যয়ে এই মন্দির বানান। কালের পাকেচক্রে অনেক বংশ পরম্পরা পেরিয়ে আজও মুখার্জি পরিবার এই মন্দিরের দায়িত্বে। শিবরাত্রির সময়ে এর ভিড় চোখে পড়ার মত। অবক্ষয় প্রতীয়মান মন্দিরগাত্রে, প্রাঙ্গণে, সর্বত্র। তবু মাথা উঁচু করে অতীতের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে গোন্দলপাড়া।
হরিপাল থেকে একটু ভিতরে আটপুর প্রচুর ঐতিহাসিক নিদর্শন ঘুরে আসতে পারেন