বিয়ের সইসাবুদ হওয়ার আগেই একটা অলিখিত চুক্তি হয়ে গেছিল শ্বশুরবাড়ির সাথে। যদি একটাও কোনো জিনিস এই বাড়িতে আসে তাহলে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবুও নিয়মের দোহাই দিয়ে দুটো বড় বড় বালিশ আর পাশবালিশ জোর করে আমার বাড়িতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। হাজার প্রতিবাদ করেও কিছু করতে পারিনি।
তবে আমার এই গল্প ওই বালিশগুলো নিয়ে নয়, বরং আমার নিজের একটা বালিশ নিয়ে যেটা বয়সে বেশ প্রবীণ এবং আমার বিছানায় অনেক কিছুর সাক্ষী। বিয়ের ওই পেটমোটা বালিশ আমার সবকিছু জানে না যতোটা আমার নিজের বালিশ জানে!
যাই হোক, ফিরে আসি বালিশে। বালিশের যদি গ্রেড ধরে এগোতে হয় তাহলে শিমুল তুলো নাকি সবার ওপরে থাকবে। আমার দাদু, তার ঠাকুরদা, এমনকি আমাদের বংশের প্রতিষ্ঠাতাও একই কথা বলে এসেছেন। এত নরম জিনিস পাওয়া নাকি বড়ই দুষ্কর।
তো, এই রকম একটা বালিশই আমার ছিল, আসলে ছিল বললে ভুল হবে; আছে এখনো। না, বংশানুক্রমে পাওয়া নয়, একেবারে নিজের গ্যাঁটের পয়সা খরচ করে বানানো এই বালিশ। শুরুর সময়ে চার না ছয় কেজি তুলো ঠুঁসে দিয়েছিলো ধুনকর বাড়ির ছাদে বসে কোনো এক শীতের সকালে। সেই থেকে চলছে, আজও সে আমার সঙ্গী। বয়সের ভারে সে আজ শীর্ণকায়, মোটামুটি বিছানা আর সে দুজনেই সমতলে অবস্থান করে। তবু সে আমার বড় প্রিয়, তাকে ছাড়া আমার ঘুম অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
গত দশ বছরে আমার সাথেই সে ভারত ভ্রমণ করেছে, উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারতের জল হাওয়া খেয়ে বড় হয়েছে। কোনোদিন জানার সুযোগ হয়নি কোনটা বেশি প্রিয় তার, তবে বিনা বাক্যব্যয়ে সে আমার মাথার সেবা করে চলেছে। আগে পরে কত সবাই এলো গেলো, দেশী এমনকি বিদেশীও; তবু আমার নিজের শহর কলকাতার শিমুল তুলো জিন্দাবাদ!