শহর থেকে দূরে – টাকি

কলকাতা থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে, যেখান থেকে আর একটা দেশ সত্যিই যেন ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে । অজানাকে জানার ইচ্ছেতে প্রায় ই চোখ চলে যায় নদীর ওপারে । হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন – দূরের দেশটার নাম বাংলাদেশ, নদী ইচ্ছেমতি (ইছামতী) আর শহরের নাম হল টাকি । সেই ব্রিটিশ আমলের শহর, সাথে রাজবাড়ীর কথকতা এক মহমহী রূপ দেয় নদীকেন্দ্রিক এই শহরকে । পুব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ আর আটচালা বাড়ির ভগ্নাবশেষ নিয়ে রাজবাড়ী আজ মৃতপ্রায় । ছাদবিহীন খোলা বারান্দা আজ শীতের পিকনিকের মূল স্থান ।

একটা ভ্যান ভাড়া করে নিলেই ঘুরিয়ে আনবে একটু দূরে ৩০০ বছরের কালীবাড়ি আর জোড়া শিবের মন্দির । সাথে নন্দলাল জীউ এর প্রাচীন বিগ্রহ, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, ছোট ছেলেমেয়েদের খেলার পার্ক । উপরি পাওনা ছোট হুজুরের দরগা, পদ্মপুকুর আর শ্মশানঘাট । টাকি হল জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী দের আদি বাড়ি । অনেকটা বড় জায়গার ওপর আজ প্রাথমিক বিদ্যালয় আর পাশেই আদি বাড়ি, সাথে বড় দুর্গা দালান । ভাঙ্গাচোরা বাড়িতে অযত্নের ছাপ স্পষ্ট ।

টাকিতে এলে যে দুটো জিনিস না দেখে ফেরা যাবে না সেগুলো হল মাছরাঙ্গা দ্বীপ আর গোলাপাতার জঙ্গল । ইছামতী আর ভাসা নদীর সংযোগে মাছরাঙ্গা দ্বীপ, পিকনিক এর জন্যে আদর্শ। নৌকো বিহার নেহাত মন্দ না, ওপারে বাংলাদেশ আর নদীর মাঝে দ্বীপ। গোলাপাতার জঙ্গল বি এস এফ এর অধীনে, তাই এখানে ঢোকার জায়গায় পরিচয় পত্র জমা রেখে তবে যাওয়া যায় ভেতরে। ভ্যান রিক্সাতে যাওয়ার আলাদা একটা অনুভূতি আছে আর ভেতরে ম্যানগ্রোভের অরণ্য মন ভাল করে দেবে। এ যেন এক মিনি সুন্দরবন যেখানে সুন্দরী, গরাণ, গেওয়া সবাই আছে। পায়ে পায়ে জঙ্গল পেরিয়ে কিম্বা আলের পথ ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় একদম ইছামতীর পাড়ে, হাত বাড়ালেই ওপার বাংলা।

ফেরার পথ সব সময়ই মন খারাপ করে দেয়, টাকি ও তার ব্যাতিক্রম নয়। ভ্যানে করে টাকি স্টেশন আর ট্রেনে করে ঘরে ফেরা। সাথে টাকির বিখ্যাত ছানার মালপোয়া, মাখা সন্দেশ আর খাঁটি খেজুর গুড়। একদিনের ছুটি শেষ কিন্তু স্মৃতিটা তাজা থেকে যাবে অনেকদিন। একরাত থাকলে হয়তো আরও ভাল করে জানা যেত টাকির জনপদ, সেই ফিরে আসার ইচ্ছে নিয়েই আবার দিন গোনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.