রামুকাকা কলকাতায় যে বাড়িতে সারা দিন মানে সারা বছর ফাই-ফরমাস খাটে, সেই বাড়ির ছোটবাবু রামুকাকাকে খুব ভালোবাসে। সেদিন তো ওই বারো বছরের বাচ্চাটা অবাকই হয়ে গেলো যখন শুনলো রামুকাকা কোনোদিন প্লেনেই চড়েনি। অবাক হয়ে সে বললে, আমরা তো সবসময় প্লেনে চড়েই বেড়াতে যাই। তুমি ট্রেনে করে দেশে যাও কেন? ছাপরা জেলায় বড় হওয়া রামুকাকার কাছে এর কোনো উত্তর ছিল না।
মাস কয়েক পরে ছট পুজোর সময়ে দেশে যাবে বলে মা-ঠাকুরণের কাছে অনুমতি চেয়েছে রামুকাকা। দিন দুয়েক পর বাবু নিজে একটা খাম রামুকাকাকে দিয়ে বললেন, রামু, তুই তো সবসময় ট্রেনে যাস, এবার প্লেনে চলে যা। রামুকাকা তো একদম বোবা। বুঝতেই পারছিল না কি বলবে!
হাতে দিন সাতেক সময় আছে, মেসে ফিরে এসে সব্বাইকে জিজ্ঞেস করলো, প্লেনে যাওয়ার কি কি নিয়ম। কেউ বলতে পারে না, কেউ কেউ তো জানেই না যে পাটনাতে আবার এরোপ্লেন যায়!অগত্যা, ভরসা সেই ছোটবাবু। রোজ গিয়ে ছোটবাবুর সাথে কথা বলে আর মুখস্থ করার চেষ্টা করে কোথায় কি করতে হবে। মোটা মাথায় কি আর এসব জিনিস ঢোকে বাপু। একটা জিনিস বুঝে গেছে রামুকাকা, এয়ারপোর্টে বসে বেশী কথা বলা যাবে না, তাহলেই সবাই বুঝে যাবে যে সে ইংরেজি জানে না।
দিনের দিন রামুকাকা অনেকটা আগেই পৌঁছে যায় এয়ারপোর্টে। কোনোরকমে মুখে কোনো কথা না বলে আধার কার্ড দেখিয়ে ঢুকে তো পড়েছে। বোর্ডিং পাসও জোগাড় হয়েছে অনেকবার মাথা নাড়িয়ে। এবার বসেছে একটা নরম চেয়ারে, শুনতে পাচ্ছে পাশে দুই বাঙালি কি একটা নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা করছে।
কান পাতলো রামুকাকাঃ
‘ক’ বাবু – আরে দাদা, বলবো কি আপনাকে। সিট এর জন্যে তো পয়সা দিয়েছি, এখন বলে কিনা আপনার সাথে যদি আর কেউ যেতে চান যার টিকিট নেই তাকে প্লেনের মেঝেতে বসে নিয়ে যেতে পারবেন। ভাড়া আপনার অর্ধেক দিলেই হবে। কি দিনকাল পড়লো বলুন দেখি!
‘খ’ বাবু – তাহলে আমারটা শুনুন। ওই সুন্দরী মেয়েটা বলে কিনা আপনি দড়ি ব্যবহার করবেন নাকি সিট বেল্ট। আঃ মরণ! আপনার টিকিটে নরম নাইলনের দড়ি ফ্রি, সিট বেল্টের জন্যে এক্সট্রা টাকা দিতে হবে।
‘ক’ বাবু – তাও তো ভালো দাদা, আপনার এইটুকুর ওপর দিয়ে গেছে। আগের মাসে আমি তো বোর্ডিং পাস নিয়ে দাঁড়িয়েই আছি, বাস এসে নিয়ে যাবে। বাসের ছেলেটা আমার টিকিটের রং দেখে বলে দিলো, আপনার তো বাস নেই। হেঁটে উঠতে হবে, আর যেখানে নামবেন সেখানেও প্লেন থেকে নেমে হেঁটে টার্মিনালে যেতে হবে। ওহ হ্যাঁ, তবে প্লেনে বসে এয়ার হোস্টেসের থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আপনি আপগ্রেড করে নিতে পারে্ন। আমি তো এবার এগুলো সব আগে থেকে পে করে তবে এসেছি।
‘খ’ বাবু – আমার ছেলে তো সেই জন্যেই আলাদা করে টাকা দিয়ে অনেক কিছু অ্যাড করে দিয়েছে। আমার ডায়াবেটিস, দু’ঘন্টায় দুবার তো টয়লেট যেতেই হবে প্লেনে, তাই ওই টাকাটা টিকিটের সাথেই দিয়ে দিয়েছে। আগেরবার খুব অসুবিধা হয়েছিল, ওরা ক্যাশ টাকা নেয় না আর আমিও বাথরুমে যেতে পারছিলাম না।
‘ক’ বাবু – ঠিকই করেছেন। আমার মেয়ে খুব ভিতু, তাই আগে থেকেই অক্সিজেন আর লাইফ জ্যাকেটের পেমেন্ট করে দিয়েছে। ওরা তো বলে দিয়েছিলো, যাদের আগে থেকে পেমেন্ট করা থাকবে তাদের মাস্ক আগে ওপর থেকে নামবে আর কোনও লক ছাড়াই লাইফ জ্যাকেট নিয়ে নিতে পারবো সিটের নিচে থেকে।
রামুকাকা তো সব শুনে total confused. বুঝতে পারছে না প্লেনটা কি আদোও তাকে নিয়ে কলকাতা থেকে পাটনা যাবে? নাকি বলবে প্লেনের পেছন পেছন চলে আসুন, আপনার টিকিটে ওটাই আছে!!!!!!